বেনাপোলে ১৯ কেজি সোনা চুরি, জড়িত কর্মকর্তা পালিয়ে বিদেশে

Passenger Voice    |    ০৪:৪১ পিএম, ২০২৪-০৩-০৬


বেনাপোলে ১৯ কেজি সোনা চুরি, জড়িত কর্মকর্তা পালিয়ে বিদেশে

প্রায় চার বছর আগে যশোরের বেনাপোল কাস্টমস থেকে ১৯ কেজি সোনা চুরি হয়। চুরির হোতা হিসেবে চিহ্নিত এক কাস্টমস কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছেন। কিন্তু কোন দেশে তিনি আছেন, জানা যায়নি। অন্য আসামিদের সবাই হাই কোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। দেড় বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে দুই বছর আগে পাঁচ কাস্টমস কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। কিন্তু তাতে নাম নেই প্রধান অভিযুক্ত কাস্টমসের তৎকালীন উপ-কমিশনার এস এম শামীমুর রহমানের। তদুপরি মামলায় মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করায় দীর্ঘায়িত হয়ে যায় তদন্ত। শেষ হয়নি আজও। উদ্ধার হয়নি চুরি যাওয়া সোনা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যে কক্ষে সোনার ভল্ট ছিল, তার পাশের কক্ষেই বসতেন কাস্টমসের তৎকালীন উপকমিশনার এস এম শামীমুর রহমান। তার সংশ্লিষ্টতায় ১৯ কেজি সোনা চুরির ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া যায়। বেনাপোলের তৎকালীন সিপাহি এবং এস এম শামীমুর রহমানের অফিস অর্ডারলি পারভেজ সিআইডিকে জানিয়েছেন, তার স্যার (শামীমুর) চাকরি ছেড়ে বিদেশ চলে গেছেন। কিন্তু কোন দেশে তিনি আছেন, তা নিশ্চিত হতে বিভিন্ন সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। তার খোঁজ পেতে যোগাযোগ করা হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)।

এনবিআর জানায়, বেনাপোল থেকে এস এম শামীমুর রহমানকে প্রথমে সিলেট আবগারি ও ভ্যাট বিভাগে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি কর্মরত থাকাকালীন ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে তাকে সিলেট কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সদর দফতরে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি ওই আদেশের দুই দিন পর থেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত। কারণ দর্শানোর নোটিস দিলেও তার কোনো জবাব দেননি। সর্বশেষ গত বছরের ১৭ অক্টোবর এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এস এম শামীমুর রহমানের বিরুদ্ধে চাকরি থেকে পলায়নের অভিযোগ এনে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। এরপর আর কোনো হদিস নেই তার।

সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ৯ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি ছুটি এবং ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে কাস্টমস অফিস বন্ধ ছিল তিন দিন। এই সময়ে কাস্টম হাউসের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলার গুদামের তালা ভেঙে কাস্টমসের ভল্ট থেকে চুরি হয়ে যায় ১৯ কেজি ৩১৮ দশমিক ৩ গ্রাম সোনা। চুরি হওয়া সোনার সে সময়ের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এই ভল্টের চাবি ছিল তৎকালীন ভল্ট ইনচার্জ ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলের কাছে। ১২ নভেম্বর সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা এমদাদুল হক অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় চুরির মামলা করেন। একই সঙ্গে যুগ্ম-কমিশনার শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

একই বছরের ২৫ নভেম্বর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। দেড় বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৪ জুন পাঁচ কাস্টমস কর্মকর্তাসহ সাতজনকে আটক দেখিয়ে চার্জশিট দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ বিশ্বনাথ কুণ্ডু, সাবেক ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল সরদার, শহিদুল ইসলাম মৃধা, আর্শাদ হোসাইন, মোহাম্মদ অলিউল্লাহ, আজিবার রহমান মল্লিক এবং বেনাপোলের ভবেরবের পশ্চিমপাড়া গ্রামের শাকিল শেখকে অভিযুক্ত করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, সোনার বার আসামিরা বিক্রি করে ফেলায় তা উদ্ধার সম্ভব হয়নি। আর আসামিরা সবাই হাই কোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। চার্জশিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর সিআইডির পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম সোনা চুরির ঘটনাটি মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করে ওই আইনে মামলা করারও সুপারিশ করেন। এরপর তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক কাজী মাইনুল ইসলাম। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আজাদ রহমান জানান, মানি লন্ডারিংয়ের দিক থেকে বিষয়টির এখনো অনুসন্ধান শেষ হয়নি। তা চলমান আছে।